বিকল্প কথননীতি

অদ্বয় চৌধুরী

“ফিনিশ হতে আর মিনিট পাঁচেক টাইম আছে গল্পটার।”

একটা মার্ডারের তোড়জোড় চলছে। একটি মিনিবাস ঢুকছে। সেই বাসে আছে সেই ব্যক্তি যাকে খুন করা হবে। আছে কি নেই সেটা অবশ্য তখনো জানা যায় না। কিন্তু তার থাকবার সম্ভাবনা আছে। এদিকে অপেক্ষারত দুই খুনী তৈরি। এইরকম এক টানটান উত্তেজনার মুহূর্তে কথক, অথবা লেখক, ঘোষণা করলেন গল্পটা ‘ফিনিশ’ হতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। মুহূর্তে পাঠকদের এক à¦‰à¦¤à§à¦¤à§‡à¦œà¦¨à¦¾à¦•à ° কাল্পনিক অবস্থা থেকে নামিয়ে আনলেন উত্তেজনাহৠ€à¦¨ বাস্তবে। এই সমস্ত ঘটনাই আসলে একটা গল্প, বাস্তব নয়। এই বাস্তব কিন্তু রূঢ় নয়, বরং এক আরামদায়ক বাস্তব যে বাস্তবে খুনের মতো কোন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে চলেছে না বলে পাঠক আশ্বস্ত হয়। ওই খুনটা আসলে গল্পে ঘটবে। হ্যাঁ, এখানে পাঠক ধরেই নেবে খুন হতে যাওয়া মানুষটা ঐ বাসে আছে এবং ঐ খুনটা ঘটবেই, গল্পে হলেও, কারণ গল্পটা ‘ফিনিশ’ হতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে, ঐ লোকটার ‘ফিনিশ’ হতে যতটুকু সময় বাকি আছে ঠিক ততটুকুই। এবং এখানেই যাবতীয় ট্যুইস্ট অ্যান্ড টার্ন তাদের যাবতীয় জাদুবিদ্যা র মাধ্যমে অদ্ভুত ভেল্কী দেখাতে শুরু করে। যে সম্ভাব্য ‘ফিনিশের’ প্রতি ইঙ্গিত করেন লেখক অথবা কথক সেই ফিনিশের বদলে আসল গল্পটা বরং শুরু হয় এই জায়গা থেকেই। অনেক কিছু ঘটে, অনেক চরিত্র আসে। শেষ পর্যন্ত মার্ডারটা কিন্তু ঘটে না, তবে ঘটার মতো এক পরিস্থিতিত ে গিয়ে শেষ হয়ে যায় ‘চাঁদের চোয়াল’ গল্পটা।

গল্পের মসৃণ উড়ানকে বেমক্কা এক ন্যারেটিভ জার্ক-এর মাধ্যমে তছনছ করে দেওয়ার এই প্রবণতা নবারুণের ন্যারেটিভ টেকনিককে করে তোলে স্বতন্ত্র। নবারুণ প্রথমে এক মায়াবী আবহ সৃষ্টি করেন যাতে পাঠকরা পুরোপুরি মগ্ন হয়ে পড়লে তিনি অদ্ভুত এক আকস্মিক অথচ সাবলীল ধাক্কায় সেই মোহময়ী আবরণকে ভেঙে চূর্ণ করেন। পাঠকদের টেনে বার করে আনেন গল্পের মেকী আবহের বাইরে। তারপর এক বা বহু সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করে লেখকের সর্বজ্ঞ সত্ত্বা পরিত্যাগ করে পাঠকদের স্বাধীনভাঠে ছেড়ে দেন সেই মোক্ষম সন্ধিস্থলৠও সন্ধিক্ষণৠযেখানে গল্পটি এক সম্ভাব্য অন্তিম বাঁকের মুখে অপেক্ষমাণ এবং যখন পাঠক উদগ্র বাসনায় অপেক্ষারত গল্পটির একটি নির্দিষ্ট অন্তিম পরিণতির জন্য। এই আয়োজনে অপ্রস্তুত পাঠক অনেক সময়ই বিপন্ন বোধ করে। এই বিপন্ন বোধ জাগ্রত করাই কিন্তু নবারুণের উদ্দেশ্য। তিনি চান তাঁর পাঠক কোনরকম আগাম সতর্কতামূঠ²à¦• প্রস্তুতি ছাড়া যেন তাঁর গল্পপাঠে উদ্যোগী না হয়। কারণ প্রথাগত লিখনশৈলী ও অভ্যাসকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তিনি এক নতুন কথনশৈলী আমদানি করেন যেখানে “পাঠকের সঙ্গে একটা সজীব দ্বৈরথে প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে চান নবারুণ”। [রাজীব চৌধুরী]।

পাঠকের সঙ্গে নবারুণের ‘দ্বৈরথ’ কতটা ‘সজীব’, পাঠকের নবারুণ-পাঠঠূর্ব মহড়ার প্রয়োজনীয়ঠ¤à¦¾à¦° কারণ, তাঁর গল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও পড়ে থাকা সম্ভাবনার ব্যাপ্তি ও পরিধি ঠিক কতটা হতে পারে তার প্রকৃষ্ট নিদর্শন হয়ে ওঠে ‘অন্ধ বেড়াল’ গল্পের পরিসমাপ্তি :
“জলের ধাক্কায় আর উন্মত্ত বাতাসের দাপটে হোটেলটা যখন কেঁপে কেঁপে উঠবে, নদীর দিকের খুঁটিগুলো যখন একটা একটা করে টলে যেতে থাকবে তখন হোটেল মালিক বাসনকোসন আর চেয়ার টেবিলগুলো সামনের গলির ওপারে যে রকের মতো জায়গাটা আছে সেখানে নিয়ে গিয়ে ডাঁই করে রাখতে পারে। এপাশ-ওপাশ দুলতে থাকা লন্ঠনটাও সে নিতে ভুলবে না। কিন্তু জল বেড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকলেও তা শুরু হবে টাল খাওয়া দিকটার থেকে। অন্ধ বেড়াল তখন বড়োজোর à¦…à¦ªà§‡à¦•à§à¦·à¦¾à¦•à§ƒà ¦¤ উঁচু দিকটায় সরে যেতে পারে। কিন্তু ও ঘর ছেড়ে বেরোবে না। এখানেও দুটো সম্ভাবনা রইল। ঘরটাতে আস্তে আস্তে জল বাড়তে পারে অথবা এক ঝটকায় দোতলাসমেত হোটেলটার গোটা কাঠামোটাই নদীতে ধ্বসে পড়তে পারে। এর যে কোন একটা হলে অন্ধ বেড়ালের কিছু করার নেই। হয় জল তাকে ছাপিয়ে উঠবে নয়তো ঘরের সঙ্গেই সে নদীতে তলিয়ে যাবে। কিন্তু ঝড় যদি কোন কারণে রাস্তা পালটায় বা অত ভয়াবহ না হয় তাহলে হোটেলটা যেমন আছে তেমনই থাকবে। এবং টেবিলের তলায়, অন্ধকারে বসে থাকবে অন্ধ বেড়াল। সকালে এসে বাচ্চাদুটৠও দেখতে পাবে যে চেনা জায়গাতেই সে চুপ করে বসে রয়েছে।”
এখানেই গল্পটি শেষ হয়। শেষ হয় কথকের কাজ; লেখকের কাজও। কিন্তু লেখকের হাত ছেড়ে পাঠকের স্বাধীন বিচরণ শুরু হয় এখান থেকেই, সম্ভাবনাময় এই বিস্তৃত উন্মুক্ত প্রান্তরেॠএখান থেকেই আরও একটা, বা আরও একাধিক গল্প শুরু করা যায় কিন্তু। একটি গল্প শেষ হওয়ার পর সেই গল্পের এন্ড পয়েন্ট থেকেই আরও এক বা একাধিক গল্প লেখক নিজেই লিখেছেন অবশ্য। যেমন ‘অটো’ উপন্যাসের পরবর্তী গল্প হিসাবে উপস্থিত হয় ‘মিউচুয়াল ম্যান’ এবং ‘কড়াই’ গল্প দুটি। আবার, ‘অটো’ উপন্যাসটি নিজেই ‘আমার কোন ভয় নেই তো?’ গল্পের সমান্তরাল পাঠ হিসাবে উঠে আসে। এভাবেই নবারুণের লেখায় নিয়ত চলতে থাকে গল্প নিয়ে সামগ্রিক পরীক্ষা, এবং সাথে সাথে পাঠকদের পরীক্ষাও।

পাঠক-পরীক্ ¦·à¦¾à¦° আরও একটি মোক্ষম অস্ত্র হল আন্তর্পাঠॠস্ট্রীম অফ কনশাসনেস টেকনিকের হাত ধরে নবারুণের কথনের ফাঁকে ফাঁকে অনায়াসে ঢুকে পড়ে কোন নিখাদ ঐতিহাসিক ঘটনা, অথবা অন্য কোন টেক্সট। ‘হারবার্ট†™ থেকে একটি উদাহরণ দেখা যাক:
“ঐ পরীর দিকে তাকিয়ে হারবার্ট কানে মৃতা পশ্চিমী নারীদের গান শুনতে পেয়েছিল। সেই গান দল বেঁধে বিলাপ করতে করতে এসে ধোঁয়াধুলো মাখা দোকানের কাচে ধাক্কা মারে। হায় নগ্ন পরী! জার্মান à¦®à§‡à¦¶à¦¿à¦¨à¦—à¦¾à¦¨à§‡à ° সামনে সেই রুশী যুবতী যেন— নগ্ন, দুহাত দিয়ে বুক ঢেকে দৌড়চ্ছে কালো মাটির ওপর। শুনতে সে কোন কথাই চাইছে না। ব্যস্ত পথচারীরা চুপ করে থাকলে শুনতে পেত যে হারবার্ট গুমরে গুমরে মুগ্ধ হয়ে কাঁদছে এবং সেই পরী ক্রমশ ওপরে উঠছে— তার গাল ঘষে দিচ্ছে দড়ি মইতে বাঁধা বিরাট বেলুন। শীতের পার্ক স্ট্রীটে একঝলক রেফ্রিজারৠটরের হাওয়া এসে হারবার্টকৠজড়িয়ে ধরে। হারবার্ট অলেস্টরের কলারটা তুলে দেয় এবং তাকে হলিউড ছাড়া এখন অন্য কিছু ভাবা অসম্ভব। এখনও বিকেল আছে। তখনও বিকেল ছিল। এরপর অন্ধকার ছেয়ে এলে পরীও লুকোতে শুরু করবে। গাড়ির আলো কখনো কখনো তাকে চমকে দেবে। মনে হবে তার ঠোঁট নড়ছে। অন্ধদুটো চোখে হলুদ আলো জ্বলছে। হারবার্ট ফিসফিস করে বলেছিল— জেপটে জুপটে থাকো এখন। ফের আসবখন।”
এখানে ‘দ্য ফল অফ বার্লিন’ সিনেমার দৃশ্য অনায়াসে ঢুকে পড়ে গল্পকথনের স্বাভাবিক ছন্দের মধ্যে। কাহিনী এগোয়, কিন্তু অদ্ভুত এক মোলায়েম ঝাঁকুনির মধ্যে দিয়ে। কাহিনীর এই অস্বাভাবিঠগতি ও ছন্দ, এই ন্যারেটিভ জার্ক, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এইরকম আপাতঅপ্রয়ৠ‹à¦œà¦¨à§€à§Ÿ আন্তর্পাঠৠর নিবেশ নিঃসন্দেহৠআনাড়ি পাঠককে এক অনভিপ্রেত বিপন্নতার দিকে ঠেলে দেয়। সাথে সাথে লেখকের কোন গোপন অভিসন্ধির ইঙ্গিতও কি উঠে আসে না এখানে, এই নির্বাচিত আন্তর্পাঠৠর à¦…à¦­à¦¿à¦¨à¦¿à¦¬à§‡à¦¶à§‡à ° মাধ্যমে? কোন গভীর রাজনৈতিক অভিসন্ধির আভাস?

আভাস উঠে আসে অবশ্যই। জাঁ-পল সার্ত্র লেখকের অবস্থান বিচার করতে গিয়ে বলেছেন, “…the writer’s duty is to take sides against all injustices, wherever they may come from. And as our writings would have no meaning if we did not set up as our goal the eventual coming of the freedom by means of socialism, it is important in each case to stress the fact that there have been violations of formal and personal liberties or material oppression or both.” সমাজ ও সময়ের প্রতি দায়িত্বশীঠলেখক হিসাবে প্রবল রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পন্ন নবারুণের কোন এক পক্ষ অবলম্বন ছিল অনিবার্য। সেই পক্ষ ছিল মার্ক্সবাঠের পক্ষ, রাষ্ট্রশকৠতির নিপীড়নের বিরোধী পক্ষ, প্রলেতারিৠেতদের পক্ষ, সশস্ত্র বিপ্লবের পক্ষ। এই রাজনৈতিক পক্ষাবলম্ঠনের ফলে তাঁর গল্পে পরোক্ষে, অথবা প্রত্যক্ষঠাবেই, মিশে যায় ইস্তেহার। এই অসম মিশ্রণটাও ঘটে কিন্তু ন্যারেটিভ জার্কের মাধ্যমেই। বিপ্লবী অভিঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে লেখক-কথক-পঠঠক সম্পর্কের অন্তর্বর্ঠী প্রাচীর:
“সারা দুনিয়া জুড়ে কমিউনিস্টঠ°à¦¾ ফিরে আসবে। হ্যাঁ। আসবে। তবে তার জন্যে আগামী সতেরো বছর বা তারও বেশী সময়ের প্রত্যেকটঠ¾ ঘণ্টা ও প্রত্যেকটঠ¾ মিনিট কাজে লাগাতে হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে কমিউনিস্টঠ°à¦¾ ফিরে আসবে। আসবেই। আর দশ নয়, দশ হাজার দিন ধরে দুনিয়া কাঁপবে।
সেই কথাটাই এই গল্পের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হল।”
গল্পের মাধ্যমে এখানে তিনি জানিয়ে দেন তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস যা আসলে à¦‡à¦¸à§à¦¤à§‡à¦¹à¦¾à¦°à§‡à ° নামান্তর। লেখক নবারুণের বৃহৎ রাজনৈতিক প্রোপাগানৠà¦¡à¦¾à¦° মাধ্যম হয়ে ওঠে তাঁর কথনশৈলী।

মাধ্যম হয়ে ওঠেন নবারুণ নিজেও, লেখক হিসাবে, লেখকের দায়বদ্ধতা থেকে। সাহিত্যের সংজ্ঞা নিরূপণের পথে সার্ত্র বলেছেন, “The writer is, par excellence, a mediator and his commitment is to mediation.” লেখকের দায়বদ্ধতাঠে মেনে নিয়ে তাঁর সমকাল— সমকালীন সমাজ ও রাজনৈতিক অবস্থাকে তুলে ধরার একটি মাধ্যম হয়ে ওঠেন নবারুণ নিজে। এই প্রক্রিয়াৠতাঁর কাহিনীকে এক সত্যবচনের ছাপ দেওয়া ভীষণ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। সেই আয়োজনও সম্পন্ন হয় তাঁর ব্যবহৃত কথনশৈলীর মাধ্যমেই। â€˜à¦•à¦¾à¦•à¦¤à¦¾à§œà§à§Ÿà ¾â€™ গল্পে তাঁর কাহিনীকে সরাসরি সত্যবচনের মোহর লাগানো হয় গল্প শুরু হওয়ার আগেই, লেখার একদম শুরুতেই, তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে তুলে ধরা কিছু আপাতসত্য ঘটনার বিবরণীতে, যা লেখকের বিবৃতি হিসাবে গ্রাহ্য হতে পারে।
[নির্দিষ্ট ঘটনাটি ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে ঘটেছে, ১৫ তারিখে। কয়েকটি ক্ষেত্রে জায়গা ও লোকের নাম পালটানো হয়েছে। রচনার মধ্যে গম্ভীরা, গণপত রাম, নির্ভয়-পাসৠয়ান ও ভারত বিন্দের নাম পাওয়া যাবে। এঁরা বিহারের জমিদার ও পুলিস বাহিনীর আক্রমণে নিহত অসংখ্য ক্ষেতমজুর ও হরিজন নেতার মধ্যে কয়েকজন। রচনাটির কোনো অংশই কাল্পনিক নয়।]
এই বিবৃতির মাধ্যমে পাঠককে লেখক সচেতন করে তোলেন আগত কাহিনীর সত্যতার প্রতি; এবং পাঠকের কাছে প্রত্যাশা করেন এক গুরুতর ইতিহাসের নিবিড় পাঠ। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি অপেক্ষারত পাঠকের গম্ভীর ও মনোযোগী অবস্থানকে ভেঙে দেন সুচারু প্রক্রিয়াৠ:
â€œà¦•à¦¾à¦•à¦¤à¦¾à§œà§à§Ÿà ¾ এক চোখে দেখল জিপটা ধুলো উড়িয়ে চলেছে।”
গল্পকে সত্যবচনের তকমা লাগিয়ে যে ঘটনাবলী বিবৃত হয় তা জীবন্ত মানুষের বদলে একটি নিষ্প্রাণ কাকতাড়ুয়াঠ° পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখা! এক চোখ কানা নির্বাক না-মানুষ কাকতাড়ুয়া সামঞ্জস্যহ ীন হত্যার নিরন্তর বর্ণনা দিয়ে চলে। এই প্রক্রিয়াৠপ্রহেলিকাঠ®à§Ÿ হয়ে ওঠে সত্য-মিথ্যঠর বিভাজনরেখঠ¾à¥¤ এভাবেই নবারুণ ক্রমাগত ভেঙে চলেন সমস্ত প্রাচীর, অতিক্রম করেন সমস্ত সীমারেখা— কল্পনা ও ইতিহাসের, গল্প ও à¦‡à¦¸à§à¦¤à§‡à¦¹à¦¾à¦°à§‡à °, সত্য ও মিথ্যার, বাস্তব ও অবাস্তবের, লেখক-কথক ও পাঠকের।

না-মানুষ কাকতাড়ুয়াঠ° মতোই নির্বাক না-মানুষ একটি কুকুরের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয় â€˜à¦¸à§à¦Ÿà§€à¦®à¦°à§‹à¦²à ¾à¦°â€™ গল্পের থ্যাঁতলানৠবিপ্লব-কাহঠ¿à¦¨à§€à¥¤ এই বিকল্প দৃষ্টিকোণৠ‡à¦° ব্যবহারও নবারুণের কথনশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্যর ূপে à¦‡à¦™à§à¦—à¦¿à¦¤à¦¬à¦¾à¦¹à € হয়ে ওঠে তাঁর বিকল্প রাজনৈতিক রণনীতির। এই বিকল্প রাজনৈতিক রণনীতির আরও গুরুত্বপূঠ°à§à¦£ উদাহরণ হিসাবে উঠে আসে ‘ভাসান’ গল্পটি যে গল্পের কথক হল একটি মৃতদেহ। নবারুণের একদম প্রথম গল্পতেই কথক হিসাবে মৃতদেহের ব্যবহার সূচীত করে পরবর্তীতে তাঁর বৈপ্লবিক রাজনৈতিক যুদ্ধের অন্যতম জাদুবাস্তব ীয় হাতিয়ার: প্রেতের ব্যক্তিসতৠতারোপ। এই রণকৌশলের বাস্তবায়নৠপরে মসোলিয়াম জেগে উঠে গঠন করে জীবিত ও মৃতদের বৈপ্লবিক আঁতাত। বিপ্লবের এন্ড পয়েন্ট মৃত্যু নয়, বরং মৃত্যুর পর, মৃত-à¦œà§€à¦¬à¦¿à¦¤à§‡à ° বিপ্রতীপ আঁতাতের মাধ্যমে বিপ্লব নবজন্ম লাভ করে। মৃতদেহকে কথক হিসাবে উপস্থাপনাঠমাধ্যমে নবারুণের সর্বপ্রথম গল্প থেকেই কথনশৈলীর রাজনৈতিকরঠপ্রকট হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, এক অন্য প্রেক্ষিতৠ‡, কথক তথা লেখকের মৃত্যুর আভাসও সূচিত করে এই উপস্থাপনাॠএ হল উত্তরাধুনঠক প্রেক্ষিতॠ¤ উত্তরাধুনঠকতাবাদ ও মার্ক্সবাঠের স্ববিরোধী সহাবস্থান নবারুণের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য†মতাদর্শগত ভাবে মার্ক্সবাঠরূপী এক গ্র্যান্ড ন্যারেটিভৠর সমর্থক হলেও উপস্থাপনাৠভীষণভাবেই তা উত্তরাধুনঠক। শুধুমাত্র উপস্থাপনা নয়, কিছু ক্ষেত্রে বিষয়গত ভাবেও নবারুণের গল্প হয়ে ওঠে উত্তরাধুনঠক। এমনকি, কথনশৈলীও বহন করে সেই ভাবধারা। সেও এক অন্য রাজনৈতিক চেতনা, কিন্তু সেই রাজনীতি হল লিটল্ ন্যারেটিভৠর রাজনীতি— লিটল্ ম্যাগাজিনৠর রাজনীতি। ‘ফোয়ারার জন্য দুশ্চিন্তা ’ গল্পে এই বিপ্রতীপ ভাষ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়:
“ফোয়ারার কথা এর আগে দুটো গল্পে আমি রটিয়েছিলাঠ®à¥¤ কিন্তু বেশি কেউ জানতে পারেনি। জানার কথাও নয়। কারণ গল্পদুটো বেরিয়েছিল লিটল ম্যাগাজিনৠ। সেগুলো নিয়ে কেউ টিভি-র ছবি বা ফিল্ম— কিছুই করেনি। তাই কেউ জানতেও পারেনি। ফোয়ারাকে নিয়ে আমার তিন নম্বর গল্পও রুজপমেটম মাখা কোনো বড়ো কাগজে সায়া পরে বেরোচ্ছে না।... এবারেও লিটল ম্যাগাজিন...à ¥¤â€
বালজাক পাঠপ্রতিকৠরিয়ায় রোলাঁ বার্ত যে প্রশ্ন তুলেছিলেন⠔ “Who is speaking here?”, আমরাও সেই একই প্রশ্ন তুলতে পারি— এখানে বক্তা কে? গল্পটির কোনো চরিত্র? নাকি, কথক? নাকি, লেখক নিজেই? এখানে চরিত্র-কথক-à ¦²à§‡à¦–কের পারস্পরিক মিথষ্ক্রিৠায় সৃষ্টি হয় এক আপাদমস্তক রাজনৈতিক ভাষ্য। তথাকথিত মূলধারার à¦‰à¦šà§à¦šà¦¬à¦°à§à¦—à§€à Ÿ বড়ো কাগজ ও বিকল্পধারঠর প্রান্তবর্ গীয় ছোট কাগজের দ্বন্দ্বমৠলক অবস্থান, এবং সেই দ্বন্দ্বমৠলক রাজনৈতিক সমীকরণে নবারুণের একটি নির্দিষ্ট পক্ষাবলম্ঠন। সেই পক্ষ অবশ্যম্ভাঠীভাবে প্রান্তজ উপাদানের প্রতি। তাঁর অবস্থান বরাবরই à¦…à¦¬à¦¹à§‡à¦²à¦¿à¦¤à¦¦à§‡à ° পক্ষেই থাকে।

à¦…à¦¬à¦¹à§‡à¦²à¦¿à¦¤à¦¦à§‡à ¦° পক্ষাবলম্ঠনের জন্যেই, হয়তো বা, রাজনৈতিকভঠবে নবারুণ ঝুঁকে থাকেন পাঠকদের প্রতি, কারণ “Classical criticism has never paid any attention to the reader; for it, the writer is the only person in literature!” [রোলাঁ বার্ত]। পাঠকদের চিরকালীন অবহেলিত ও প্রান্তিক অবস্থান ঘোচাতে নবারুণ লিখনশৈলীর রাজনৈতিকরঠঘটান। তিনি গল্পের নির্মাণ, তার বিষয় ও বক্তব্যকে মান্যতা দেওয়া এবং না দেওয়ার সমান স্বাধীনতা দেন পাঠকদের; পাঠকদের করে তোলেন লেখকের সমতুল। এ হল উত্তরগঠনবঠ¾à¦¦à§€ ভাবধারা। তাঁর ‘জনৈক নৈরাজ্যবাদ ীর সংবাদ’ নামক গল্পের কথনশৈলী বহন করে উত্তরগঠনবঠ¾à¦¦à§‡à¦° তত্ত্বকথা:
“এই লোকটির কথা শুনেছিলাম আমার এক বন্ধুর কাছে। আমার ওই বন্ধু হল মনোযোগ চিকিৎসক। এখন তার প্রতিপত্তি পসার অনেক বেড়েছে। তখন তেমন হয়নি। সরকারি হাসপাতালে তখন সে ছিল। তার কাছেই এসেছিল। নৈরাজ্যবাদ ী। এইটুকু বলার পরে বাকিটুকু একটি à¦…à¦¨à§à¦šà§à¦›à§‡à¦¦à§‡à ¦‡ হয়তো শেষ করে দেওয়া যেত। কিন্তু যেহেতু এক্ষেত্রে আমারা একটি গল্পের শর্তাধীন, তাই অন্যভাবে এগোতে হবে। আমরা যেভাবে ব্যাপারটি সাজাব সেভাবে সম্ভবত ব্যাপারটা ঘটেনি। কিন্তু অন্যভাবে সাজানোর অধিকার আমাদের কেউ কি দিয়েছে? দেয়নি! লেখা ব্যাপারটাঠএক হাতের স্বেচ্ছাচঠ¾à¦°à¥¤ এ-সব হল খটকা। রয়ে গেছে। যাবেও।”
এখানে যে লেখক সে নিজের অস্তিত্বেঠ° à¦…à¦ªà§à¦°à§Ÿà§‹à¦œà¦¨à§€à Ÿà¦¤à¦¾à¦•à§‡à¦‡ গুরুত্বসহঠারে তুলে ধরে। লেখক যাত্রা করে এক অমোঘ অনস্তিত্বৠর দিকে; এবং গল্প, এক উৎসহীন সত্তা রূপে, রয়ে যায় ‘নিউট্রাল⠙ অবস্থানে যেখানে পাঠকের উপর কোন আরোপিত ব্যাখ্যা বা ভাষ্যের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় না, কারণ বার্তের ব্যাখ্যানৠসারে “…writing is the destruction of every voice, of every point of origin. Writing is that neutral, composite, oblique space where our subject slips away, the negative where all identity is lost, starting with the very identity of the body writing.” লেখকের এই অনস্তিত্বঠলেখাকে করে তোলে à¦…à¦¬à¦°à§‹à¦§à¦®à§à¦•à§à ¤ যা নবারুণের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

à¦…à¦¬à¦°à§‹à¦§à¦®à§à¦•à§à ¤ কাহিনী, অথবা কাহিনীর à¦…à¦¬à¦°à§‹à¦§à¦®à§à¦•à§à ¤ গঠন এক বৃহত্তর সত্যের ধারক হয়ে ওঠে— বহমানতার এক নিশ্চিৎ আভাস আরোপ করে। এই বিষয়ে নবারূণ নিজে এক সাক্ষাৎকাঠ°à§‡ বলেছেন,
“আমার মনে হয়েছে উপন্যাস একটা ধারাবাহিকঠায় পৌঁছে শেষ হয়। অর্থাৎ উপন্যাসে সব দরজা বন্ধ হয় না— খোলা থাকে, এর পরও জীবন চলবে, কাহিনী চলবে। আমি যা উপন্যাস পড়েছি— রুশ উপন্যাস, জার্মান-ফরঠসি উপন্যাস, সোভিয়েত উপন্যাস— সে সবেই দেখেছি এই চলমানতার বোধটা এনে ছেদ টানা হচ্ছে। সেই চলমানতার বোধটা না আসা পর্যন্ত গল্প চলতে থাকে।”
এই চিন্তাধারা অনুসরণ করেই “হারবার্ট† উপন্যাসটি যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানেই ফিরে আসে, এবং সেই স্থান থেকে আর একটু এগিয়ে, বহমানতার স্বাক্ষর সূচীত করে, শেষ হয়। আসলে, যদি সামগ্রিক আঙ্গিকে বিচার করা হয়, অনিবার্যভঠবে দেখা যায় নবারুণের আখ্যানগঠন, তাঁর কথননীতি এ সবই তাঁর বৃহত্তর বিকল্প রণনীতি সন্ধানের হাতিয়ার। এই সন্ধান প্রক্রিয়া জারী থাকে চিরকাল। নবারুণ জারী রাখেন। কারণ, বিকল্প মানেই অগুণতি; এবং, ফলস্বরূপ, অগুণতি বিকল্পের সন্ধানপ্রঠ্রিয়া এক চিরন্তনী প্রক্রিয়াॠবিকল্প রণনীতির সন্ধানপ্রঠ্রিয়া কোনদিনই ‘ফিনিশ’ হয়ে যায় না, ‘ফিনিশ’ হতে পারে না!


উৎস ও ঋণ:
১) “উপন্যাস সমগ্র”, নবারুণ ভট্টাচার্য
২) “শ্রেষ্ঠ গল্প”, নবারুণ ভট্টাচার্য
৩) ‘নবারুণ ভট্টাচার্য র শ্রেষ্ঠ গল্প’, রাজীব চৌধুরী; “শ্রেষ্ঠ গল্প”, নবারুণ ভট্টাচার্য
৪) ‘Situation of the writer in 1947’, Jean-Paul Sartre
৫) ‘For Whom Does One Write’; “What is Literature”, Jean-Paul Sartre
৬) ‘The Death of the Author’; “Image-Music-Text”, Roland Barthes
৭) “The Norton Anthology of Theory and Criticism”, Edited by B., Vincent Leitch
৮) ‘নবাররুণ ভট্টাচার্য ের সঙ্গে কথাবার্তা†™, “কথাবার্তঠ¾â€, নবারুণ ভট্টাচার্য
৯) ‘নবারুণ স্মরণ: বিষণ্ণতা, দহন এবং দ্রোহপরিসৠথিতি’, অর্ক চট্টোপাধ্ঠায়